টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌর নির্বাচনে ৮৬.৬৬% কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দাবি, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনসহ সব ধরনের প্রস্ততি নিয়েছে প্রশাসন’
দ্বিতীয় ধাপে আগামী শনিবার (১৬ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমে অনুষ্ঠিতব্য এই পৌরসভার ১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মেয়র, কাউন্সিলর, ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মোট ৪৫ জন প্রর্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ১৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে, তবে ১৩টি অর্থাৎ ৮৬.৬৬% কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনসহ সব ধরনের প্রস্ততি নিয়েছে প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত কেন্দ্রের ভেতর ৮ জন পুলিশ এবং ১২ জন আনসার এবং সাধারণ কেন্দ্রের ভেতর ৬ জন পুলিশ এবং ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি ২ প্লাটুন বিজিবি, দুইজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাবের দুইটি দল দায়িত্ব পালন করবেন।”
এদিকে, পৌর নির্বাচনে শেষ মুহুর্তে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। পৌর পিতার আসনে এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। পোস্টারে-পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌর এলাকার অলিগলি। এবারের নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন, বিএনপির প্রার্থী এস এম এ সোবহান এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) সদ্য বহিস্কৃত উপজেলা যুব লীগ সভাপতি মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকল (নারিকেল গাছ) ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আলী কিসলু (জগ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ৯টি সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ২৮ জন এবং ৩টি মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন প্রার্থী থাকলেও মূলত নৌকা, ধানের শীষ ও নারিকেল গাছের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এছাড়া এই পৌরসভায় প্রথম বারের মতো ইভিএমএ ভোট এবং কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের নিজ জন্মস্থান হওয়ায় নির্বাচনী আমেজ আরও একধাপ বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে ভোটারদের সাথে কথা বলে প্রার্থীদের ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
ধনবাড়ী বাজারে ভোটার হারুন অর রশিদ ও টাকুরিয়া গ্রামের জুলেখা বেগম বলেন, যার দ্বারা আমাদের পৌরসভার নাগরিকদের জীবন মান উন্নত হবে, নাগরিক সুবিধা বেশি দিবে এমন যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিব।
তরুণ ভোটার খালেক ইসলাম, আল-আমিন ও মো. হাবিব বলেন, আমারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিব। যিনি আমাদের এ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌর সভা সবাইকে উপহার দিতে পারবে। আমারা এ পৌর সভাকে আধুনিক পৌর সভা হিসাবে দেখতে চাই।
আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বলেন, আমি নির্বাচিত হয়ে আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পূন্ন করতে চাই। শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বির্নিমানে একটি আধুনিক মডেল তিলোত্তমা পৌরসভা গড়ার লক্ষ্যে নির্বাচনে নৌকার পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিজয়ের ব্যাপারে ইনশাআল্লাহ আমি শতভাগ আশাবাদী।
বিএনপি প্রার্থী এসএমএ সোবহান বলেন, ভোটারদের মধ্যে আমি যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখেছি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমি প্রশাসনের কাছে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকল বলেন, প্রচার-প্রাচারণায় আমাকে প্রতিনিয়ত বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। এ দিকে প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিই বিজয়ী হব।
১৯৯৬ সালের প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় শ্রেণির এ পৌরসভার জনগণ বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক সুবিধা ভোগ করছে। এবারে নির্বাচনে ১৫টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩০ হাজার ৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৪৬৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১৫ হাজার ৫৪০ জন। সকাল ৮টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।