কিশোরগঞ্জে ৮ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা শুরু
By Md. Liakat Ali
4 days ago
3050

৮০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের অন্যতম গ্রামীণ উৎসব কুড়িখাই মেলা শুরু হয়েছে। গত সোমবার ১১ ফেব্রুয়ারি বিশাল তামার পাতিলে তবারক রান্না আর বাউল-ফকিরের আসরের মধ্য দিয়ে সপ্তাহব্যাপী এই মেলা শুরু হয়। কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই এলাকার এই প্রাচীন মেলাটি কিশোরগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলা হিসেবে পরিচিত। এই মেলাকে ঘিরে আশেপাশের সব এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে ।
কুড়িখাই এলাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) এর বংশধর হযরত শাহ সামছুদ্দীন (রহ.) এর মাজারকে কেন্দ্র করে এলাকায় প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ সোমবার এই মেলা শুরু হয়। সপ্তাহব্যাপী মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সার্কাস, মৃত্যুকূপ, নাগরদোলা, পুতুল খেলাসহ রকমারি পসরা নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। বসে বিন্নি ধানের খই, কদমা, বাতাসা, গুড়, জিলাপির দোকান। এই মেলায় পাওয়া যায় বিশাল আকৃতির মাছ, কাঠের আসবাবপত্র ও মাটির তৈজসপত্র।
তবে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলা শুরু হলেও এক সপ্তাহ আগেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এবার এই মেলার আয়োজন চলছে। ফলে মেলা শুরুর দিনেই মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
হযরত শাহ সামছুদ্দীনের পুরো নাম হযরত শাহ সামছুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বোখারী (রহ.)। কথিত আছে, ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে বার আউলিয়ার অন্যতম শাহ সামছুদ্দীন (রহ.) প্রায় ৯০০ বছর আগে তার তিন সহচর শাহ কলন্দর, শাহ নাছির ও শাহ কবীরকে নিয়ে কুড়িখাই এলাকায় আস্তানা স্থাপন করেন। তিনি ইহলোক ত্যাগ করলে এখানেই তার মাজার গড়ে ওঠে। তার মাজারকে কেন্দ্র করে ১২২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ওরস ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে জানা যায়।
প্রাচীন এই মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনকে মেলার বিশেষ দাওয়াত দেওয়া হয়। চারদিক থেকে এলাকার ছেলে-বুড়ো নানা বয়সের মানুষ সপ্তাহব্যাপী মেলার স্বাদ ভোগ করতে আসে।
এই মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাছের হাট। মেলায় বিশাল এলাকাজুড়ে বসে মাছের হাট। এই হাটে বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই, কাতল, সিলভার কার্পস, পাঙ্গাস, মাগুর, বাঘাইরসহ নানা ধরণের অন্তত চার শতাধিক মাছের দোকান বসে। মাছ বিক্রেতারা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা সুনামগঞ্জের হাওর ও নদী থেকে এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে এসব মাছ সংগ্রহ করে মেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের লোকজন এই মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান।
স্থানীয় প্রবাদ রয়েছে, কুড়িখাই মেলার মাছ খেলে সকল বালা মুসিবত দূর হয়। মেলার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে প্রতিবাড়িতে মেলা উপলক্ষে নতুন জামাই ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াতের রীতি রয়েছে।
কটিয়াদী থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুদ্দীন জানান, মেলার পরিবেশ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।