এবার বৌদ্ধরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে

মিয়ানমার থেকে এবার বান্দরবানে
ঢুকে পড়েছে দেশটির বেশ কিছু নাগরিক। প্রতিবেশী দেশটির অভ্যন্তরে বিদ্রোহী বাহিনীর
সঙ্গে সে দেশের সামরিক বাহিনীর ‘যুদ্ধ অবস্থা’র
কারণে জীবন বাঁচাতে বিশেষত বৌদ্ধ ধর্মের জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে বলে ধারণা
করা হচ্ছে।
গতকাল
মঙ্গলবার ঢাকাস্থ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ লুইন ও কে জরুরি তলব করা হয় এবং ঢাকার
পক্ষ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। বান্দরবানের স্থানীয়
প্রশাসন স্বীকার করেছে, সোমবার রাতে বেশ কয়েকটি পরিবার রুমা সীমান্ত পার হয়ে
চইখ্যং বমপাড়ায় ঢুকে পড়েছে। অনুপ্রবেশকারী ৩৫টি পরিবারের ১৬০ জনের একটি তালিকাও
করা হয়েছে। এখন গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তাদের খাবারের জোগান দিচ্ছে।
সেনাবাহিনীর
রুমা জোন থেকে একটি টিম গতকাল চইখ্যং বমপাড়ার উদ্দেশে রওনা হয়। সীমান্তবর্তী এলাকা
হওয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদেরও সেখানে ডাকা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট
সূত্র জানায়। রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুল আলম বলেন, ‘অনুপ্রবেশের
ঘটনা সত্য। রেমাক্রি প্রানশা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বারকে ঘটনাস্থল চইখ্যং
বমপাড়ায় পাঠানো হয়েছে।’
রুমা
উপজেলা চেয়ারম্যান অং থোয়াই চিং জানান, মিয়ানমার থেকে মানুষজন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে—এমন
নিশ্চিত তথ্য তাঁরা পেয়েছেন। স্থানীয় সূত্র এবং রুমা উপজেলার রেমাক্রি প্রানসা ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান জিরা বম জানান, গত মঙ্গলবার দুপুর ২টায় গণনা করে ৩৫টি পরিবারের নারী-পুরুষ,
শিশুসহ ১৬০ জনের তালিকা করা হয়েছে। এই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অনুপ্রবেশ করা
মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে খেও, খুমি ও রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন রয়েছে। তবে
তাদের মধ্যে কোন সম্প্রদায়ের কতজন রয়েছে—তা আলাদা করে জানা যায়নি।
রুমা
উপজেলা প্রতিনিধি জানান, সীমান্তের ওপারে গভীর বনাঞ্চলে মিয়ানমারের
সরকারবিরোধী গেরিলা গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) অবস্থান রয়েছে। তাদের উসকানিতে নাকি ‘যুদ্ধ
অবস্থা’র কারণে নিরাপত্তা নিয়ে ভীত হয়ে তারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে—নিশ্চিত
তথ্য পাওয়া যায়নি।
নেপিডোকে
সতর্ক করল ঢাকা
মিয়ানমারের
রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়, গত দেড় বছরে বাংলাদেশের শত চেষ্টা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকে
ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। এ অবস্থায় নতুন করে পরিকল্পিতভাবে রাখাইন অস্থিতিশীল করে দলে
দলে বৌদ্ধদের বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র
বন্ধ করতে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়
বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
অনু বিভাগের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন
এবং ঢাকার বার্তা তাঁর সরকারের কাছে পৌঁছানোর অনুরোধ জানান।
গত মাসে
রাখাইনে বৌদ্ধ বিদ্রোহীদের হামলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাতজন নিহত হয়। মিয়ানমারের
স্বাধীনতা দিবসে রাখাইনে বৌদ্ধ বিদ্রোহীরা চারটি পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায়। এরপর
থেকে রাখাইনের নিরাপত্তা বাহিনী নতুন করে অভিযান চালাচ্ছে।