এখানেই শেষ নয় মাশরাফি অধ্যায়!
‘মাশরাফি একজনই। সে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক। তার মত অধিনায়ক আর আসবে না। আমরা তার অবদান সম্মান করি। তার বিদায়ের ক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখা হবে। ক্রিকেট থেকে মাশরাফির বিদায় যেন হয় রাজসিক, সে চেষ্টাই করা হবে’- ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বিদায় নেয়ার পর সংসদ সদস্যদের নিয়ে হওয়া ক্রিকেট উৎসবে জাগো নিউজসহ একাধিক মিডিয়ার সামনে এ মন্তব্য করেছিলেন বিসিবি বিগ বস।
কিন্তু নির্মম সত্য হলো রাজসিক বিদায় বহু দূরে, মাশরাফি মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিতে পারবেন কি না- সেটাই সন্দেহ। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের ২৪ জনের প্রাথমিক দলেই নেই মাশরাফি। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, সবার মতামত নিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই জাগে প্রশ্ন, তাহলে কি জাতীয় দলে মাশরাফির দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল? দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের বর্ণাঢ্য চরিত্র, ইনজুরির সঙ্গে নিরন্তর লড়াই-সংগ্রাম করে বারবার মাঠে ফিরে সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়া এ সাহসী যোদ্ধা, সফলতম সেনাপতি কি তবে আর কখনও জাতীয় দলে জায়গা পাবেন না? তার কি মাঠ থেকে বিদায় নেয়া হবে না?
সোমবার দুপুরের পর থেকে যত সময় গড়াচ্ছে, এ প্রশ্ন ততই জোরালো হচ্ছে। সেই সাথে অগণিত মাশরাফি ভক্ত, সমর্থক আর ক্রিকেট অনুরাগির কৌতূহলি জিজ্ঞাসা, ‘আচ্ছা মাশরাফির সঙ্গে বসে তার অবসরের বিষয়ে একটা যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য সমাধান কি করা যেত না?
আজ (মঙ্গলবার) সকালে বিসিবি পরিচালক, অন্যতম নীতি নির্ধারক ও মিডিয়া কমিটি চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, মাশরাফির মত ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক অবসরের বিষয়টি কি আরও ভালভাবে সমাধান করা যায় না? বিসিবি থেকে অবসরের ব্যাপারে মাশরাফির সঙ্গে বোর্ডপ্রধান কিংবা শীর্ষকর্তারা বসে কথা বললে কি একটা যুক্তিযুক্ত সমাধান বেরিয়ে আসত না?
জালাল ইউনুসের উত্তর, ‘না, না! আমরা কেন মাশরাফিকে ডেকে বসে কথা বলব? এটা তো একান্তই মাশরাফির ব্যাপার। আমরা যে মন-মানসিকতা নিয়ে বা যত আন্তরিকতা নিয়েই বসি না কেন, সেটা ভাল দেখাবে না। এর অর্থ দাঁড়াবে, আমরা জোর করে তাকে অবসর নিতে বাধ্য করছি। আমরা (বোর্ড) তা করব কেন? মাশরাফি খেলা চালিয়ে যাবে কি যাবে না? অবসর নেবে কি নেবে না? কবে কখন সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চায়- পুরোটাই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা তা বলতেও চাই না। বোর্ড কখনওই তাকে অবসরের সময়সীমা বেঁধে দেয়নি, অবসর নেয়ার কথা বলেনি।’
বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যানের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রাথমিক দলে না নেয়া হলেও, মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়নি এখনও। তার কথায় মিলেছে আভাস, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে ফিট প্রমাণের পাশাপাশি কার্যকরী বোলিং করতে পারলে মাশরাফির ফেরার সম্ভাবনাও থাকবে। তাই জালালের শেষ কথা, ‘শুনেছি মাশরাফি ঘরোয়া ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চায়। সে খেলুক। যদি নিজেকে ফিট প্রমাণের পাশাপাশি বোলিং নৈপুণ্য দেখাতে পারে, তাহলে আবার হয়তো সুযোগ পাবে।’
হাঁটু-গোড়ালির ইনজুরি আর অপারেশনের ধকল কাটিয়েও সেই ২০১১’র পর আবার প্রায় ১০ বছর খেলা চালিয়ে গেছেন। বার বার প্রতিকূলতাকে জয় করার নাম মাশরাফি। এখনও তার বলের ধার শেষ হয়ে যায়নি। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের এক ম্যাচে ৫ উইকেট দখল করে সে সত্যই জানান দিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
মাশরাফির বলের এখনকার যে ধার, তার লাইন-লেন্থ ও বুদ্ধি খাটিয়ে বল করার যে ক্ষমতা-সামর্থ্য; তাতে আগামীতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ অর্থাৎ ৫০ ওভারের ফরম্যাটেও আবার জ্বলে ওঠা কঠিন নয়। তখন কী হবে? মাশরাফি বল হাতে বারুদ ছড়ালে কি আর নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে না নিয়ে পারবে?
